স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তম বেসরকারী এতিমখানা। ১৯০৯ সনে ঢাকার তদানিন্তন নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুর তদীয় বাসভবনে “ইসলামিয়া এতিমখানা” নামক একটি অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৫ সনে তার মৃত্যুকাল পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় ব্যয়ভার নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ্ বাহাদুর তাঁহার ব্যক্তিগত তহবিল হতে বহন করেন। অতঃপর এতিমখানাটি ঢাকার লালবাগে একটি ভাড়াটে অট্টালিকায় স্থানান্তরিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব একটি ব্যবস্থাপক কমিটির উপর অর্পন করা হয়। ১৯১৮ সনে পুনরায় এতিমখানাটি বর্তমান অবস্থানে অর্থাৎ ৪৮ নং আজিমপুর রোড, ঢাকায় একটি ক্ষুদ্র অট্টালিকায় স্থানান্তর করা হয়।
১৯২৩ সনের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিলো। উক্ত সনের মে মাসে নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ্ বাহাদুরের জৈষ্ঠপুত্র নওয়াব হাবিবুল্লাহ বাহাদুরের সভাপতিত্বে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হয় এবং “স্যার সলিমুল্লাহ্ মুসলিম এতিমখানা” নামে নতুন নামকরণ করেন। প্রধানতঃ তাঁহারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও কতিপয় বিশিষ্ট উদার ব্যক্তির সহায়তায় এতিমখানাটি বহু বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে ক্রমোন্নতির দিকে অগ্রসর হয়েছে। ঐ সমস্ত মহৎ প্রাণ ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শনস্বরুপ কাহারো কাহারো নাম অনুসারে এতিমখানার বিভিন্ন ভবন ও বিভাগের নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৫৮ সনের ২৫শে নভেম্বর নওয়াব খাজা হাবিবুল্লাহ্ বাহাদুরের ইন্তেকালের পর তাঁহার সুযোগ্য পুত্র মেজর (অবঃ) নওয়াব খাজা হাসান আসকারী অত্র এতিমখানার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদাৎ বরণ করলে তিনি উক্ত সময়েই দেশত্যাগ করেন। ১৯৭৯ সনে তাহাদেরই বংশ পরিচয়ে বেগম সামছুন্নাহার এতিমখানাটির পরিচালনা দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং ২০০৬ সন পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯-২০১৪ সনের মার্চ মাস পর্যন্ত তার ছেলে খাজা জাকী আহসানউল্লাহ্ (সানী) এতিমখানার সভাপতি পদে দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪-২০২১ সাল পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন অফিস এতিমখানার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। মহামান্য হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের নির্দেশে ২০২১ সনের এপ্রিল মাসে সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) ও যুগ্ম-সচিব জনাব মোঃ কামরুল ইসলাম চৌধুরী এতিমখানাটির প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁহার সাহসী ভূমিকা ও আন্তরিকতার ফলশ্রæতি স্বরুপ নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়। বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদ এতিমখানাটির দীর্ঘদিনের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করার মাধ্যমে একটি আধুনিক মডেল এতিমখানা গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
আমাদের বর্তমান শুভাকাঙ্খী ও সাহায্যদানকারী যাহাদের শুভেচ্ছা ও সহায়তা ব্যতিরেকে আমাদের বহুবিধ দুরুহ সমস্যার সমাধান ও প্রতিষ্ঠানের ক্রমবর্ধমান ব্যয়ভার বহন করে এতিমখানাটিকে অগ্রগতীর পথে পরিচালিত করা কোন ক্রমেই সম্ভবপর হতো না আমরা তাদের কৃতজ্ঞতার সহিত স্বরণ করি।